অনলাইন ডেস্ক
সূরা বাকারার ২৭৫-২৭৯ নং আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘যারা সুদ খায় তারা জিনে ধরা পাগল ব্যক্তির মতো হাশরের মাঠে দাঁড়াবে। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে, ব্যবসা তো সুদের মতোই।
অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন আর সুদকে হারাম করেছেন। প্রতিপালকের নির্দেশ আসার পর যে ব্যক্তি বিরত হয়েছে, সে পূর্বে যা নিয়েছে তা তারই থাকবে। তার ব্যাপার আল্লাহর এখতিয়ারে। কিন্তু এ নির্দেশের পরেও যারা সুদে জড়িত হবে তারা জাহান্নামে যাবে। তারা চিরকাল সেখানেই থাকবে। আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান-খয়রাতকে বর্ধিত করেন। কোনো অস্বীকারকারী পাপীকে তিনি পছন্দ করেন না। … হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো।
তোমরা যদি মুমিন হয়ে থাক; তবে সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও। যদি না ছাড় তবে জেনে রাখ, এটা আল্লাহ ও তার রাসূলের সঙ্গে যুদ্ধ। কিন্তু তোমরা যদি তওবা করো, তবে তোমাদের মূলধন তোমাদেরই থাকবে। তোমরা অত্যাচার করবে না, তোমরা অত্যাচারিত হবে না। ’
সুদের বিষয়ে পবিত্র কোরআনে আরও কয়েক স্থানে আলোচনা করা হয়েছে। যেমন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আল্লাহকে ভয় করো। তাহলে তোমরা সফল হতে পারবে। ’ -সূরা আল ইমরান: ১৩০
‘মানুষের সম্পদ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে তোমরা যে সুদ দিয়ে থাক আল্লাহর দৃষ্টিতে তা সম্পদ বৃদ্ধি করে না। কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে তোমরা যে জাকাত দিয়ে থাক তা বৃদ্ধি করে। প্রকৃতপক্ষে জাকাত প্রদানকারীরাই সমৃদ্ধি আনে। ’ -সূরা রূম: ৩৯
পবিত্র হাদিসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও সুদের ব্যাপারে স্পষ্ট কথা বলেছেন। যেমন, মেরাজের রাতে আমি এমন একটি দল অতিক্রম করেছি যাদের পেট ঘরের মত (বড়)। ভিতরে অনেক সাপ। যা পেটের বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিল। আমি বললাম, হে জিবরাইল! এরা কারা? তিনি উত্তর দিলেন, এরা আপনার উম্মতের সুদখোর লোক। -ইবনে মাজাহ: ২২৭৩
আমরা (আমি, জিবরাইল ও মিকাইল) চলতে চলতে একটি রক্ত নদীর পাড়ে পৌঁছলাম। নদীর মাঝে এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। তীরে দাঁড়িয়ে আছে আর এক জন। তার কাছে কিছু পাথর আছে। নদীর ভিতরের লোকটি তীরে এসে যখনই পাড়ে উঠার চেষ্টা করে তখনই তীরের লোকটি তার মুখ বরাবর পাথর ছোঁড়ে তাকে আগের জাগায় ফিরিয়ে দেয়। যত বার উঠার জন্য অগ্রসর হচ্ছে তত বারই মুখের ওপর পাথর ছোঁড়ে পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে দিচ্ছে। আমি বললাম, এ কে? তারা (জিবরাইল ও মিকাইল) উত্তর দিল, নদীর ভেতরের লোকটি একজন সুদখোর। -সহিহ বোখারি: ২০৮৫
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিশাপ দিয়েছেন সুদখোরকে, সুদ দাতাকে, সুদের লেখককে, সাক্ষীকে। এবং তিনি বলেছেন, এরা সকলে সমান অপরাধী। -সহিহ মুসলিম: ৪১৭৭
সুদ ও ব্যবসার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হলো, ব্যবসাতে পণ্যের বিপরীতে মুদ্রা আদান-প্রদান করা হয়, অথবা এক জাতের পণ্যের বিপরীতে ভিন্ন জাতের পণ্য আদান-প্রদান হয়। কিন্তু সুদের কারবারে মুদ্রার বিপরীতে মুদ্রা আদান-প্রদান করা হয়, অথবা স্বজাতের পণ্য আদান-প্রদান করা হয়। ব্যবসাতে বিনিময় সুনির্দিষ্ট হয় এবং পরবর্তী সময়ের তারতম্যে বিনিময়ের পরিমাণে কোনো হ্রাসবৃদ্ধি পায় না। কিন্তু সুদের কারবারে বিনিময় সুনির্দিষ্ট হয় না বরং হার নির্দিষ্ট হয়। সময়ের তারতম্যে বিনিময়ের মোট পরিমাণে হ্রাসবৃদ্ধি ঘটে।
সুদ বর্জন করে ব্যবসা ও উন্নয়নের গতিকে বহমান রাখার জন্য ইসলাম অনুমোদিত পন্থাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পন্থা হলো, মুজারাবা, মুশারাকা, আকদে ইজারা, আকদে ইসতিসনা, বাইয়ে সলম, বাইয়ে মুরাবাহা ও মুআজ্জাল।
সুদের ব্যাপারে ইসলাম যে পরিমাণ কঠোর কথা বলেছে অন্য কোনো গুনাহর কাজের ব্যাপারে সে পরিমাণ কঠোর কথা বলে নেই। দয়াল নবী সুদের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে অভিশাপ দিয়েছেন। আল্লাহতায়ালা সুদখোরের সঙ্গে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। তাই আমাদের ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন ও সামাজিক জীবনের সামগ্রিক অর্থব্যবস্থা হোক সুদ থেকে পবিত্র।
Leave a Reply